মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য

চতুর্থ শ্রেণি (প্রাথমিক) - খ্রিষ্টধর্ম ও নৈতিক শিক্ষা - NCTB BOOK

                                                                                                                                প্রথম অধ্যায়
                                                                                                                                        মানুষ সৃষ্টির উদ্দেশ্য
ঈশ্বরের প্রতিটি সৃষ্টিরই এক একটা বিশেষ উদ্দেশ্য আছে। যেমন, একটি ফলের বীজকে তিনি সৃষ্টি করেছেন যেন এটি থেকে একটি গাছ হয়। গাছটি যেন যথাসময়ে বড় হয়ে ফল দেয়। সেই ফল খেয়ে যেন মানুষ ও অন্যান্য জীবজন্তু বাঁচতে পারে। ঈশ্বর আমাদেরও একটি মহৎ উদ্দেশ্য নিয়ে সৃষ্টি করেছেন। আমরা এখন আমাদের জন্য ঈশ্বরের সেই মহৎ উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানব। এরপর আমরা আমাদের উৎস ও শেষ গন্তব্যস্থলের বিষয়েও জানব। এই পৃথিবীতে আমরা কীভাবে ঈশ্বরের দেখানো পথে চলতে পারি সেই বিষয়েও আলোচনা করব।
আমাদের উৎস
আমাদের উৎস হলেন ঈশ্বর। তাঁর কোনো শুরুও নেই, শেষও নেই। তিনি আদিতে ছিলেন, এখন আছেন ও চিরকাল থাকবেন। ঈশ্বর সর্বশক্তিমান ও সব জানেন। তিনি সব জায়গায় আছেন। তিনিই আমাদের সৃষ্টি করেছেন। এই বিশ্বের সবকিছু সৃষ্টি করার পর তিনি তাঁর নিজের প্রতিমূর্তিতে আমাদের সৃষ্টি করেছেন। তিনি শুধু তাঁর মুখের কথায় আমাদের সৃষ্টি করেছেন। আমাদের মধ্যে ঈশ্বর দেহ, মন ও আত্মা দিয়েছেন। আমাদের স্বাধীন ইচ্ছা এবং ভালো-মন্দ বেছে নেওয়ার শক্তিও তিনি দিয়েছেন। ঈশ্বরের কাছ থেকে আমরা আত্মা পেয়েছি। আমাদের আত্মা ঈশ্বরের মতোই অদৃশ্য। ঈশ্বরের আত্মার সাথে আমাদের আত্মার একটা সংযোগ আছে। প্রার্থনা ও ধ্যানের মাধ্যমে আমরা ঈশ্বরের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করতে পারি। তখন আমরা ঈশ্বরের কথা শুনতে ও তাঁর ইচ্ছা জানতে পারি। ভালো ও মন্দ বুঝতে পারি। তা জেনে ভালো পথে চলার সিদ্ধান্তও নিয়ে থাকি। ঈশ্বরের শক্তিতে আমরা অনেক ভালো কাজ করতে পারি। এভাবে আমাদের সঠিক নৈতিক জীবন গড়ে ওঠে।

 

 

 

 

 

 

 

 

 

আমাদের শেষ গন্তব্যস্থল ঈশ্বর। আমরা যে উৎস থেকে এই পৃথিবীতে এসেছি, সেই উৎসের কাছেই আমরা একদিন ফিরে যাব। আমরা তাঁর সাথে এক হয়ে যাব। ঈশ্বর আমাদের সৃষ্টি করে এই পৃথিবীতে রেখেছেন তাঁর গৌরবের জন্য। তিনি আমাদের সর্বদা পালন ও রক্ষা করেন।

পরিবার ও বন্ধুদের সাথে বিভিন্ন সময়ে আমরা অনেক আনন্দ করতে পারি। এই সুযোগ আমরা ঈশ্বরের কাছ থেকে পেয়েছি। তিনি আমাদের বিভিন্ন রকমের গুণ দিয়েছেন। এগুলো দিয়ে আমাদের নিজ নিজ দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করি। পরিবার, সমাজ ও দেশের জন্য সেবামূলক কাজ করি। আমাদের নিজ নিজ দেহ, মন ও আত্মার যত্নও নিতে পারি। এভাবে আমরা শেষ গন্তব্যের দিকে ধীরে ধীরে এগিয়ে যাই। ঈশ্বরের কাছে ফিরে যাওয়ার জন্য একদিন আমাদের ডাক আসবে। সেদিন যেন আমরা যোগ্যভাবে তাঁর সামনে উপস্থিত হতে পারি। অর্থাৎ আমরা যেন এমন একটি পথে চলতে পারি, যে পথ আমাদেরকে আমাদের উৎসের কাছে পৌঁছাতে সাহায্য করবে।

ঈশ্বরের দেখানো পথ

আমাদের শেষ গন্তব্যে পৌছার জন্য ঈশ্বর আমাদের জন্য একটি পথ দেখিয়েছেন। তাঁর দেখানো পথে চললে আমরা অবশ্যই তাঁর কাছে পৌঁছাতে সক্ষম হবো। ঈশ্বরের দেখানো পথ হলেন তাঁরই একমাত্র পুত্র যীশু খ্রিষ্ট। যীশু নিজেই বলেন, “আমিই পথ, আমিই সত্য, আমিই জীবন! আমাকে পথ করে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না” (যোহন ১৪:৬)।

 

 

যীশুর দেখানো পথ তথা যীশুকে জানতে হলে আমাদের পবিত্র বাইবেল পাঠ করতে হবে। পুরাতন নিয়মে যীশুর আগমনের বিষয় বলা হয়েছে। আর নতুন নিয়মে যীশুর জীবন, কথা ও কাজ সম্পর্কে লেখা রয়েছে। এখানে রয়েছে পাপ পরিহার করে পবিত্র পথে চলার জন্য ঈশ্বরের বিভিন্ন আজ্ঞা ও নির্দেশ। ঈশ্বরভক্তজনেরা কীভাবে তাঁর পথে চলেছেন সেগুলোও এখানে লেখা আছে। এ বিষয়গুলো ভক্তি, বিশ্বাস ও প্রার্থনাপূর্ণভাবে পাঠ করলে আমরা ঈশ্বরের নির্দেশিত পথ সম্পর্কে জানতে পারি। এগুলো মেনে চললে আমরা তাঁর কাছে যেতে পারি। তাঁর সাথে মিলিত হয়ে আমরা অনন্ত সুখ লাভ করতে পারি।

কী শিখলাম

আমাদের উৎস হলেন স্বয়ং ঈশ্বর। তিনি ছিলেন, আছেন এবং চিরকাল থাকবেন। তিনিই শেষ গন্তব্যস্থল।

পরিকল্পিত কাজ

ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে একটি প্রশংসামূলক প্রার্থনা লেখ ।

নিচের গানটি একসাথে গাও

এই পথে যেতে যেতে ছন্দবিহীনভাবে পথ খুঁজে খুঁজে মরি হায় । তবু কেন বারে বারে এই পাপ-অন্ধকারে পথ খুঁজে খুঁজে মরি হায় । আমি সত্য, পথ, আমি জীবন । আমা দিয়ে না আসিলে, যীশু বলেছেন (৩ বার) হবে মরণ।

অনুশীলনী

১। শূন্যস্থান পূরণ কর

(ক) ঈশ্বরের প্রতিটি সৃষ্টিরই এক একটা বিশেষ----------------আছে।

(খ) ঈশ্বর ------------------------ ও সব জানেন। 

(গ) ঈশ্বর শুধু মুখের কথায় আমাদের-----------করেছেন।

(ঘ) ঈশ্বরের কাছ থেকে আমরা------------পেয়েছি।

(ঙ) পুরাতন নিয়মে যীশুর-----------------বিষয় বলা হয়েছে।

 

 

৩। সঠিক উত্তরটিতে টিক (✓) চিহ্ন দাও

৩.১। আমাদের শেষ গন্তব্যস্থল

(ক) মানুষ

(খ) ঈশ্বর

(গ) স্বৰ্গ

ক) ঈশ্বরের মতোই অদৃশ্য।

(ঘ) পৃথিবী

৩.২ পরিবার ও বন্ধুদের সাথে আনন্দ করার সুযোগ আমরা পেয়েছি— 

ক) দিয়াবলের কাছ থেকে

(খ) শিক্ষকের কাছ থেকে

(গ) বাবা-মার কাছ থেকে

(ঘ) ঈশ্বরের কাছ থেকে

৩.৩ যীশুকে জানতে হলে আমাদের কী পড়তে হবে?

(ক) বাইবেল (খ) বাংলা ব‍ই (গ) ম্যাগাজিন (ঘ) পত্রপত্রিকা

৩.৪ কে আদিতে ছিলেন, এখন আছেন ও চিরকাল থাকবেন?

(ক) মানুষ

(খ) দিয়াবল 

(গ) ঈশ্বর

(ঘ) স্বর্গদূত

৩.৫ ঈশ্বর সবশেষে কী সৃষ্টি করলেন?

(ক) গাছপালা

(খ) পশুপাখি 

(গ) আকাশ

(ঘ) মানুষ

৪। সংক্ষেপে নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও 

(ক) ঈশ্বর কেন আমাদের সৃষ্টি করেছেন?

(খ) ঈশ্বর কীভাবে আমাদের সৃষ্টি করেছেন?

(গ) ঈশ্বরের দেখানো পথটি কী?

৫। নিচের প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও

(ক) আমাদের শেষ গন্তব্যস্থল সম্পর্কে লেখ ৷

(খ) ঈশ্বরের দেখানো পথ বলতে কী বুঝ? ব্যাখা কর ।

(গ) পবিত্র বাইবেল থেকে আমরা কী বিষয়ে জানতে পারি?

 

 

 

Content added By
Promotion